আমার প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার!

আমি প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করি ২০১০-২০১১ এর দিকে, তখন আমি ক্লাস-৪ এ। আমার কাছে নোকিয়া n-70 ফোনটি ছিল!

তো প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়ে গেছিলো, তখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার ছুইছুই। আমার আসেপাশে তেমন কাউকে জানতাম না যে ইন্টারনেট চালায়, আমি নিজেই এটার নামও শুনি নাই। এটা কি, এটা ব্যবহারে সুবিধা কি, আমি কেনইবা এটি ব্যবহার করব? কিভাবেইবা ব্যবহার করবো? এসব কিছুই জানতাম না।

আমার নোকিয়া ফোনে আমি সিম ব্যবহার করতাম না, এমনি ফোনের বিল্ড ইন গেম গুলা খেলতাম। তো একদিন কোন কারনবশত আমার আম্মুর ফোন থেকে সিম খুলে আমারটায় লাগাই। সম্ভবত নতুন সিম ছিল। তাই একাউন্ট ব্যালেন্স ৫০ টাকার মতো ছিল।

যাই হোক সিম ফোনে লাগানোর পর কোন বিশেষ কাজ করি নাই। রাতে টিভিতে হিন্দি মুভি হচ্ছিলো “কোই মিল গায়া”, এই মুভি দেখে আমি ভাবতেছিলাম আমারো যদি কোন যাদু থাকতো, কোন এলিয়েনশিপ গভীর রাতে আমার বাসার সামনে আসতো, তারপর আমার কাছে থাকতো, তাহলে কতই না মজা হতো!

ইস এসব ভাবতে ভাবতে হাতে ফোন টা নিয়ে ঘাটতেছিলাম, হঠাৎ চোখে পড়লো আমার ফোনে পৃথিবীর আইকন দিয়ে কি যেন একটা। ওটাতে ঢুকতেই ঘুড়তে থাকতো🤣, আমিও আবার ওটা দেখতেছিলাম আর ভাবতেছি যে আমার ফোন দিয়ে পৃথিবী থেকে অন্য গ্রহে সংকেত পাঠাচ্ছে। আমি অনেক খুশি হয়ে গেছিলাম। একসময় ঘুরতে ঘুরতে সাদা কি যেন একটা ফোনে বের হলো, একটা পেজ, পেজে আবার বক্স বক্স। এটা দেখে আরো বিস্ময় হয়ে গেলাম। আরো কনফার্ম হলাম এটা আসলেই এলিয়েনকে পাঠাচ্ছে, এদের ভাষা হয়তো বক্স বক্স। কিন্তু সেখানে আবার বড় করে লেখা বের হচ্ছিলো Google লেখা।

আমি বক্স গুলায় উড়াধুরা ক্লিক করতে লাগলাম, মুভির মতো যেভাবে বাটন প্রেস করছিলো। ভাবলাম এবার এলিয়েন চলে আসবে।

পরের দিন এই জিনিস আমার এক বন্ধু (আরিয়ান) ওকে দেখানোর জন্য এক স্যার এর প্রাইভেটে ফোন নিয়ে ওকে দেখাই। আর বলি যে এসব কি? তখন আরিয়ান ফোনটা নিয়ে যায়।ওর বড় বোনকে দেখানোর জন্য!

তারপরের দিন এসে আমাকে বললো এটা ইন্টারনেট। আমি উল্টা জিজ্ঞেস করে বললাম ইন্টারনেট আবার কি! তখন সে উত্তরে বললো এই গুগলের বক্সে যা লিখে সার্চ দিবি সেটাই বের হবে।

তখন ওখানেই আমি “Tom & Jerry” লিখে সার্চ করি। রেজাল্ট হিসেবে আমি অনেক গুলা ছবি পাই। এটা দেখে আমি পুরাই হতবাক। যে কেমন করে আসলো?

তো সেইদিন অনেক কিছুই সার্চ দিতে দিতে বাসায় আসলাম। আমার ছোট বোন (সোহাগী) ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে যাদু দেখবি?

ও বললো দেখা, তখন আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে তুই দুনিয়ার যেটাই বলবি সেটাই দেখাইতে পারবো।

তখন ও বললো ‘টম আর জেরি”

আমি সার্চ করে দেখাই দিলাম, ও দেখে খুশি, তখন আরো কিছু সার্চ করে দেখাই, “Chota bheem, Ben 10” এসব দিয়ে।

তো সেই দিন এটা নিয়েই পরে ছিলাম। কারন এটা এতো অবাক করা জিনিস ছিল যে যাদুর থেকে কম না।

কিন্তু এই যাদু বেশিক্ষন টিকলো না। আমার বড় ভাই আর আমি এটা নিয়ে মারামারি করতেছিলাম রাতে। মারামারির শেষ পর্যায়ে সিধান্তয় আসলাম যে ১০ মিনিট করে করে দুজনে চালাবো।

এভাবে রাত ১১টায় ৩-৪ বার আমার হাতে আসার পর শুধু পৃথিবী ঘুরে ঘুরে আর ঘুরে। অনেক সময় পর দেখায় “Connection Time Out”

বার বার এটা আসায় রেখে ঘুমাই গেলাম। পরের দিন আরিয়ানকে আবার দেখাইলাম, সে আবার ওর বোনকে দেখাই এসে আমাকো বললো যে ইন্টারনেট শেষ।

মানে বললো তোর টাকা শেষ। টাকা না থাকলে এটা চলে না। তখন জিজ্ঞেস করলাম, এটার জন্য কিসের টাকা লাগবে?

তখন আমি ৫টাকা আর আরিয়ান ৫টাকা দিয়ে ১০ টাকা ফোনে রিচার্জ করলাম। দেখলাম আগের মতোই চলে!

তখন বুঝলাম টাকা ছাড়া এটা চলে না।

তো এখন আসি সেই প্রথম দিনের ঘটনায়, ফোনে যেটায় পৃথিবীর মতো আইকন ছিল, ওটা আসলে বিল্ট ইন মোবাইলের ব্রাউজার। আর বক্স বক্স আসার কারন হচ্ছিলো যে নোকিয়া ফোনটায় বাংলা সাপোর্ট কর‍তো না। আর গুগল এর হোম পেজ এ বাংলায় সব লিখা ছিল!

আর তখনো আমি ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে কিছু জানতাম না। টাকা রিচার্জ করতাম আর চালাতাম। কিন্তু ক্লাস ৪ এর শেষে এসে ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে জানলাম! এর আগে Pay as go তেই চালাতাম!

তো এসবে পরেও আরো অনেক কাহিনী আছে, পরের কোন এক পোস্টে লিখবো। এখনকার মতো এখানেই।

আল্লাহ হাফেজ!